শনিবার, ১৫ মে, ২০১০

মধুচক্র

স্বাতী মিত্র জ্বালিয়ে যাচ্ছে। অপরাধআমার দুর্বলতা। কোনও এক নরম সন্ধ্যায় হৃদয় উজাড়করে পিরিতির কাব্যকথা।তারপর খুনসুটি। এরপর যা হয়ে থাকে তা-ই হল।
স্বাতীর ফ্লাট থেকে নামার সময় দু-চারটেদৃষ্টিবাণ বেশ অনুভব করি। ওর অতিথিরা আশাহাউসিং-এ আদৃত নন। এটা নতুন কিছুনয়। এখন সব হাউসিং-এই একাকী মহিলা, ডিভোর্সীদু-চারজন থাকেন। যাঁদেরপ্রতিটি পদিক্ষেপই ক্যামেরায় ধরা। অদ্ভুত নব্য সভ্যতায় সমৃদ্ধ এইবহুতলকালচার। প্রমোটার, সরকারি চাকুরে, অধ্যাপক, কালোবাজারি, দুঁদে রাজনীতিকেরসাম্যবাদি সহাবস্থান। অতীতকে ফেলে এসে নতুন জীবন। কিছু লাভ, কিছু লোকসান।সবাইএকই সঙ্গে দৌড় আরম্ভ করেছে। অচেনা দৌড়বীরেরা অজানা জীবনপঞ্জির ওপরঅহেতুকসম্ভ্রম আছে। সম্পর্কের শীতলতা কাটাতে প্রথম প্রজন্ম কেটে যায়। এরইমধ্যে কিছু একাকিনীআছেন, আলোচনা আর কৌতূহলের বিষয়বস্তু হয়ে।
বিনাছাতায় ভিজতে হয়। একাকিনী মহিলা প্রতিপদে হোঁচট খান। জিজ্ঞাসু দৃষ্টি বাদৃষ্টিতারল্যে। মিসেস মিত্র এসব মানিয়ে নিয়েছেন। এখন ত্রিশ। সুর্য সবে মাঝগগনে। পশ্চিমেহেলতে অনেক দেরি। বিবাহবিচ্ছেদের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছেআত্ম-সন্মোহনে।উচিত-অনুচিত, অভাব-প্রাপ্তি, অনেক অনুভুতির ঐক্যতানে।ইতিহাস, বর্তমানের অর্থ, ভবিষ্যতের লক্ষ্য স্থির করার সময় যখন এল, জীবনঅনেক সমস্যার জটিল পাটিগনিত। পার্থপ্রথম ক মাস খোরপোশ দিয়েছে, আদালতেরনির্দেশ মতো। পরে অনিয়মিত। এখন একদমবন্ধ। বাবা সরকারি চাকুরে ছিলেন।স্নেহশীল পিতা। মেয়েকে তিনতলার ফ্ল্যাট দিয়ে গেছেন।ছেলেকে বঞ্চিত করে।মেয়ের বিয়ের চেষ্টাও করেছেন। কাগজের বিজ্ঞাপনে উত্তর এল, কয়েকজন বছরপঞ্চাশের প্রৌঢ়, আর একজনের বয়স বছর পঁচিশ। মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। লিভটুগেদারচায়। মেয়ের মুখের হাসি আর দেখা হল না। স্বাতী এখন একা। অনেকজনের মধ্যেএকা।
স্বাতীরফ্ল্যাটের উল্টো দিকে আছেন মিসেস পলি গুহ। তিন-এর বি। স্বামী আয়কর বিভাগেউঁচু পদে কাজ করেন। এই চল্লিশেও মিসেসের গালের লালিমা দেখে সংসারেরপ্রাচুর্য বোঝাযায়। ওঁর সঙ্গে স্বাতীর সম্পর্ক অনেকটা ভালোবাসা আর ঘৃণার।ডিভোর্সের পর মিসেস গুহঅনেক সাহস জুগিয়েছেন। হালছাড়া ডিঙার বিপদ। পুরুষেরপ্রয়োজন। প্রতিবেশীদের কেচ্ছাকাহিনি। বিবেক গুহও আইনি পরামর্শ দিয়েছেন।কিন্তু জীবন আইনের ধারা উপধারা নয়।কত অচেনা বন্দর বেয়ে একই জল বয়ে যায়।রং বদলায়, গতি বদলায়। এটা বুঝতে স্বাতীরমাত্র কয়েক মাস লেগেছে। তাকে আবারমামলা করতে হয়েছে। মাসোহারার জন্য। কদিনপরেই সে বুঝেছিল, ব্যাপারটা এতসহজ নয়। আইন শুভঙ্করীর চেয়েও জটিল। চাহিদারঅনুভুতি নানা বাঁকের ধাক্কায়গতিহীন। ঘোলা জল। সময় এগিয়েছে। ঘৃণা নিস্তেজ।আদালতে সিলিং ফ্যান খটখটআওয়াজে ঘোরে। অথচ তার কোনও বিরক্তি নেই। পার্থকেদেখেও ঘৃনা নেই। অনুভুতিনেই। এই মানুষটাকেই দিনের পর দিন দেহ দিয়েছে। স্বাভাবিকনিয়মে। কিন্তু এখনযেন ফ্রেমে আঁটা ছবি। তিনকাল একই সুরে বাঁধা তান। ডিভোর্স এতযন্ত্রনাময়।পদক্ষেপ এত যন্ত্রনাবিদ্ধ।
এখনপরিস্কার সে আর খোরপোশ পাবে না। পার্থ যতবার বন্ধ করবে, ততবার তাকেআদালতেছুটতে হবে। যা সম্ভব নয়। অর্থ প্রয়োজন। কিন্তু এত প্রয়োজন আগে বোঝেনি।কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে চাকরির আবেদনও করেছে। সাধারন স্নাতক। অভিজ্ঞতা নেই।পেশাদারি শিক্ষা নেই। কদিন বাদেই বুঝেছে ভদ্র চাকরি সম্ভব নয়। দেহদানেরঅঙ্গীকারেরবদলে চাকরি। গদির বেওসায়ি, দোকানের মালিক, বোদ্ধা প্রকাশক, এব্যাপারে সবাইসাম্যবাদী। তুমি ডিভোর্সি, আমার অর্থ আছে। দরকার নম্রসহচরী। চুক্তি অলিখিত।
বিবেকগুহ স্ত্রীর চোখ বাঁচিয়ে যতটা সম্ভব ততটা সহানুভুতিশীল। অত্যন্ত ভদ্রপরিশীলিতমানুষের কাছে যতটা ভদ্রতা আশা করা যায়। অহেতুক কৌতুহল নয়, অথচকিছু একটা করাদরকার। এই দুই-এর দন্দ্বে তিনি যে ভুগছেন, স্বাতী নারীসুলভষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের বেতারে বুঝতেপারে। বুঝতে পারে প্রয়োজনে ওঁর সাহায্যওদরকার। আর তা বিনামুল্যে নয়। স্বাতীর যথেষ্টআত্মসম্মান আছে, সে অহেতুককৃতজ্ঞতাবোধের পীড়নে জীবনকে আর জটিল করতে চায়না। সেদিন বিনা নোটিসেবিবেকবাবু কলিং বেল বাজালেন। বিনা কারনে তৈরি করাঅছিলায়। মিসেস দুপুরেকোথায় যেন বেরিয়েছেন। সময় কাটছে না। তাছাড়া মামলা সম্বন্ধেজরুরি কিছুআলোচনাও আছে। স্বাতীকে জানানো দরকার। একাকিনী মহিলা নিতান্তইঅসহায়। যতদিন যাচ্ছে স্বাতীর হিতাকাঙ্ক্ষী বাড়ছে। হাউসিং-এর সেক্রেটারি,ডাক্তারবাবু, চারতলার মেধাবী ছাত্র স্বপন। বিবেকবাবু আর একটু কাছের মানুষ।দির্ঘদিন আইনি পরামর্শদেবার সুবাদে কিছুটা হকও বোধহয় জন্মেছে। সোফায় বসতেবসতে অভিভাবকসুলভভঙ্গিতে বললেন, কী ঠিক করলেন মিসেস মিত্র?
মামলা করে কোনও লাভনেই।
তার মানে তো রাস্কেলটাকে ছেড়ে দেওয়া।
ছেড়ে তো অনেকদিনই দিয়েছি।
কিন্তু আপনার কি হবে?


আমি ভাবতে পারছি না। যা হবার তা-ই হবে।আমি তো আটকাতে পারব না।
এরকম একটা লম্পটকে ছেড়ে দেওয়া নৈতিকঅপরাধ। তাছাড়া তোমার সারাটা জীবন পড়েআছে। একটু ভেবে দেখো।
তুমিসম্বোধনে স্বাতী অবাক হয়না। বাঘবন্দির খেলায় এরকমই হয়। প্রত্যাশিত। প্রথমেভদ্রতা। পরে অন্তরঙ্গ অনুসঙ্গ। আরও পরে খাদ্য ও খাদক। তার একটা ছাতাদরকার। এখানেছুতমার্গ গৌণ। প্রথম প্রয়োজন নিরাপত্তা পরে অর্থ।
স্বাতী প্রয়োজনের অতিরিক্ত আবেগে বলে,বিবেক আমায় ডিচ্j কোরো না। আমি বড়অসহায়। ঘন বৈশাখে চোখে জল আসে।
মিস্টারগুহর অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা যেন ধাক্কা খায়। বিবেকে সূক্ষ্ম দংশন অনুভব করেন।স্ত্রীরআসতে এখনও ঘন্টা তিনেক দেরি। এর মধ্যে কি হতে পারে। কল্পনার চরমেভূমিকম্প, কাল-বৈশাখী। তিনি কিশোর প্রেমিকের মত স্বাতীর হাত ধরেন। স্বাতীকেঁপে ওঠে। যেনপ্রথম প্রেমিকের স্পর্শনিবিড় ছোঁয়া। তিন মাস ইলেক্ট্রিকেরবিল বাকি। সবুজ বিল এসেছে।রান্নার গ্যাস ফুরিয়েছে। কিনে খেতে হচ্ছে।সংসারে খুঁটিনাটি প্রয়োজন। ও এখন অসম্ভবশীতল। মস্তিস্কের সব বার্তাকেঅনুভুতির দরজায় থামিয়ে দেয়। দৃষ্টি সহজ। বার্তাবহ।আরও কাছে আসে।
দেহ মিলনেরপর মিঃগুহ সিগারেট ধরান। আর এক ঘন্টা চুরি করা সময় আছে। ফ্ল্যাটে গিয়েচানকরতে হবে। ভালোবাসাহীন মিলনের শেষে স্বাভাবিক নিয়মেই ঘৃনা আসে। গভীরেমহিলা মেয়েমানুষ হয়। এটা না হলেই বোধহয় ভালো ছিল। একই ছাদের তলায় মুখোমুখিফ্ল্যাট। দিনে দুবার দেখা হয়। স্ত্রীর বান্ধবী। জনান্তিকে মেয়েছেলে।দাম্পত্য কলহে গৃহিণিমাঝে মাঝে এই কাব্যিক বিশেষণটি ব্যবহার করেন। সাময়িকহঠকারিতায় সুদুর ফল কি হতেপারে চোখ বুজে চিন্তা করেন। এই মুহুর্তেস্বাতীকে মেয়েছেলে মনে হয় না। বরং নারী শরীরেরমৃদু গ্রন্থিসুবাস আবেশঅনুঘটকের কাজ করে। তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের কিছু যুক্তি খাড়াকরেন। স্বাতীরঅর্থের প্রয়োজন। তিনি নেহাতই দাবার ঘোড়া। তাঁর আর্থিক সঙ্গতি আছে।এখনওঅশ্বের পেশি আছে। কিছু অলিখিত কর্ত্যবোধও আছে।
মিষ্টারগুহ দাঁড়িয়ে পড়েন। স্বাতী চোখ বোজে শুয়ে। হালকা নিশ্বাস। কিছুটা নিশ্চিন্তপ্রশস্তি।হালকা হাসির ছোঁয়া। তিনি পকেট থেকে কয়েকটা একশো টাকার নোট বেরকরেন। খুবসবধানে গুঁজে দেন বালিশের তলায়।
দুই
আমারসঙ্গে স্বাতীর আলাপ নাটকের রিহের্সালে। অফিস ক্লাবের বাৎসরিক নাটকেরমহড়ায়।বিবেকদা হাত ধরে আনলেন। ওঁর হাউসিং-এ থাকে। কলেজে নাটকের অভিজ্ঞতাআছে।এখন টুকটাক কল পেলে শো করে। আমার দেখেই পছন্দ হয়ে গেল। নায়িকারচরিত্রে বেশমানিয়ে যাবে। মিটিং-এ তা-ই বললাম পরিচালক হিসাবে। কিন্তুস্বপ্নেও ভাবিনি স্বাতীরসাথেএভাবে জড়িয়ে পড়ব। এটা ছিল বিবেকদার অত্যন্ত উচ্চস্তরের চাল। আসলে তিনিমুক্তিচাইছিলেন। পরকিয়া বন্ধন থেকে। এটা বুঝতে অনেক সময় পেরিয়ে গেছে।কিছু ন্যাকামি।কিছু কাব্যকথা। এই নিয়ে স্বাতী পর্ব। যখন পুরো ব্যাপারটাবুঝলাম, তখন অনেক সুতোছেড়ে দিয়েছি। এখন হাউসিং-এর সবাই জানে আমি স্বাতীরবিশেষ বন্ধু। আড়ালে বাবু।অথচ আমি স্বাভাবিক জৈবিক নিয়মেই কাছে গেছি। পরেহৃদয় এগিয়ে আসে। দেহকে ছাপিয়েঅন্তরে গুনগুনানি। কার যে কখন কাকে ভালোলাগে।

-আমি শৈবালপাঠক। আর পাঁচজন বাঙালি ছেলের মতো স্নাতক। পরীক্ষা দিয়ে আয়করবিভাগেচাকরি। অবসরে ছোটখাট মেরামতির কাজ করি। ইলেক্ট্রনিক্স জিনিসের। অনেকটানেশা। বিবেকদার সূক্ষ্ম চালটা বুঝতে অনেকটা দেরি হয়ে গেল। যখন বুঝলামস্বাতীহাফ-গেরস্ত তখন আমি দ্বিধা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া মাকড়সার জালেমৌমাছি। ভালোবাসা বিপদজানে না। দোষ দেখে না। স্বাতীর ভালোবাসার মৌচাকেআমিই প্রধান কর্মী। বাকিরানেহাতই শ্রমিক। গনিকার বাঁধা বাবুর মতো।সূক্ষ্ম আত্মতৃপ্তিতে ভুগছিলাম। মামুলি খদ্দেরনয়। বাবু। মাইনের অর্ধেকটাকা গলে যায়। দিন দিন চাপ বাড়ছে। বিবেকদার সঙ্গে মাঝেমাঝে মুখোমুখি হয়।মুচকি হাসির ব্যঞ্জনায় বুঝিয়ে দেন, কেমন দিলাম।
আমিঅন্ধ। স্বাতীর কোনও বিশেষ বন্ধু ঘরে থাকলে, বারান্দায় বসে আমি তারা গুনি।একএকদিন ও পুরোপুরি আমার অধিকারে থাকে। মোবাইলের সুইচ অফ্। ঘর অন্ধকার।যেনসত্যিকারের প্রেমিকা। চুলে নীরবে বিলি কাটে। ঘুমন্ত গলায় বলে, শৈবাল,তুমি আমায়ভালোবাসো? j
আমি জবাব দিই না। স্বাতী ভাঙা-ভাঙাসুরে বলে, খুউব? আমি সুখের সাগরে ভাসি।ক্লান্তিহীন এক বর্ষন সন্ধ্যায় জলে ভিজি।অনেক ভিজি।
স্বাতী আধো আধো গলায় বলে, শৈবাল আমাকেএকপাতা টিপ কিনে দেবে, লাল টিপ।
আমারমনে হয় স্বাতী আমাকে ভালোবাসে। খুউব ভালোবাসে। এ মুহুর্তে চাইলে আমিহৃদপিন্ড উপড়ে দিতে পারি। বিবাহিত জীবনের চক্রব্যূহের বাইরে স্বাতী নামেরমরীচিকা বাবিদ্যুৎ কেন্দ্র, কেরানি জীবনের প্রাপ্তির উল্লাস আমাকে নিয়েযায় সেই বন্ধ্যা দ্বীপে, ঘুমন্ত একআগ্নেয়গিরি। আবার শুনি, এই নির্জনসন্ধ্যায় এক টুকরো টিপ পরিয়ে দাও ওর কপালে। চুমুখাও ওর মেঘমালা চুলে।
স্বাতীবহুচারিনী, আমার কাছে সে অস্বীকার করে না। ওর দেহ বিকিকিনি অস্বীকার করেনা। ওর বুভুক্ষা, সংসারের খুঁটিনাটি সবই আমার জানা। পুরুষের হৃদয়হীনতারকথা, অস্থিরকামনার কথা আমার অজানা নয়।
কয়েকবছরের যৌন শ্রমে ও অনেক পাল্টে গেছে। মুখের কমনিয়তায় এসেছে এক অদ্ভুতরঙ্গিণী রূপ। দুটি ভুরু দুরকম কথা বলে। তবু সেই শুনশান সন্ধ্যায় স্বাতীকেমনে হয় কঠিনগাছের বুকে জড়িয়ে ধরা এক মালতি লতা। নির্ভরতা আর বিশ্বাস।
স্বাতী স্বপ্ন ছোঁয়ায় বলে, আমার ভারনেবে? শুধু তুমি আর আমি। আমরা চলে যাব অনেকদুরে।
তা কি করে হয়। আমার সরকারি চাকরি,সংসার।
কেন হয় না? আমার জমানো কিছু টাকা আছে।এই শরীরটা বেচে জমিয়েছি। তুমি একটাব্যবসা করবে। কেউ আমাদের চিনবে না।
আমি চুপ করে থাকি। যে প্রশ্নের জবাব হয়না তার জবাব দিই কি করে?
স্বাতী খিলখিল করে ছেনাল হাসি হাসে,মুরোদ বোঝা গেছে। কাজের বেলা যত পিরিতি।
মাথাদপদপ করে। বিছানা থেকে উঠে পড়ি। শরীরে এখনও স্বাতীর গন্ধ। জামাটা গলিয়েনিই। স্বাতী মুচকি হাসে। বলে তুমি আমার ভার নাও। আমি পাশে থাকব সারাটাজীবন।একটা সূক্ষ্মঅপরাধবোধ কাজ করে, স্বাতীকে ব্যবহার করার জন্য। মিলনের উত্তাপ নাভালোবাসানা কি দুইই। নিস্তরঙ্গ জীবনে একটু ঝড়ের সন্ধান? নাকি ভাদ্র মাসেসারমেয়সুলভরিরংসা। তবু মনে হয় স্বাতীর অদর্শনে সন্ধ্যামালতির গন্ধ পাই।বড় অসহায়। হৃদপিন্ডেরখাঁচাটা বড় ছোট হয়ে আসে।
তিন
বিবেকদাআমাকে সাবধান করেন, কেটে পড়ো, ওমুখো হোয়ো না, তলিয়ে যাবে, ওনাসিসের জাহাজডুবেছিল, তুমি তো পাতি কেরানি। বিবেকদাকে আমার ভাঁড় মনে হয়। যাত্রা আসরেরমোটা রসের ভাঁড়।রসেবশে জীবন ভরপুর। এখন পুরুত মশাইয়ের চরিত্রে নেমেছেন।অনেকদিন বৌদিরসাথেমুখোমুখি দেখাহয়েছে। চোখে ক্রোধ আর ঘৃনা। অবচেতন মনে আনন্দও আছে। মুক্তিরআনন্দ। ছেনালটা স্বামীকে বশকরতে পারেনি, পেরেছে তার অধস্তন মোরগকে। এইজেতার আনন্দ তাকে ঘৃনা করতে শিখিয়েছে।কয়েকদিন আগে বিবেকদার মুখে শুনলাম,উনি নাকি দল পাকাচ্ছেন। বলে বেড়াচ্ছে মধুচক্রের কথা।হাউসিং-এর নৈতিকঅধঃপতন নিয়ে চিন্তিত। গৃহিণীরা কর্তাদের চোখে চোখে রাখছে, সেক্রেটারিরস্ত্রীনাকি একজন প্রাইভেট আড়কাঠিকেও লাগিয়েছে। আবহাওয়া উত্তপ্ত।বিস্ফোরনের অপেক্ষায়।
বিবেকদারফ্ল্যাটে অফিসিয়াল সভা ডাকা হয়েছে। সমর কৌশল ঠিক করার জন্য। কিন্তুসেক্রেটারিসমরবাবুর ভেটো নিক্ষেপে কিছু করা গেল না। উনি ব্যাপারটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেন। বলেন, ভদ্র মহিলাঅসহায়। সামান্য প্রসাধনির ব্যবসা করেন।লোকজন আসে। গুহ গিন্নি রাগত স্বরে বলেন, প্রসাধনিরব্যবসা না দেহ ব্যবসা?উনি সমরবাবুর অহেতুক দুর্বলতার ব্যাপারটা জানেন।
আপনি তো প্রায়ই চা খেতে যান, কিছুদেখেননি?
সমরবাবুপোড় খাওয়া ঠিকাদার। জীবনকে অনেক কাছ থেকে দেখেছেন। ব্যবসার খাতিরে তাঁররঙ্গিণীদের প্রয়োজন। স্বাতীকেও দু-একবার পাঠিয়েছেন। উচ্চ প্রশংসা মিলেছে।তিনি স্বাতীর কাছেকৃতজ্ঞ। সামনেই সড়ক নির্মাণের টেন্ডার বেরোচ্ছে। প্রায়পাঁচ কোটি টাকার কাজ। চিফ ইঞ্জিনিয়ারপুরোপুরি আমিষ পছন্দ করেন। আর কোনজাগতিক পদার্থে তার মোহ নেই। এতৎ অবস্থায় তিনি স্বাতীরমতো হরিণীকে কী করেএতগুলো হিংস্র হায়নার কাছে ছেড়ে দেন? তিনি বিবেকবাবুকেও দু-একবার চায়েরআসরে দেখেছেন। মুখোমুখি হয়েছেন। দুজনেই দুজনকে অর্থবোধক হাসিতে কুর্নিশকরেছেন। তারপর থেকেএকটা অলিখিত নিয়ম রক্ষা করে চলেছেন। উভয়েই। তিনি সকালেবাজার থেকে ফেরার পথে এদিক ওদিকচেয়ে স্বাতীর ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়েন। আরবিবেকদা চা-এর পেয়ালায় চুমুক দেন সন্ধ্যার আলো আধাঁরিতে। এইবিনা পয়সারপিরিতি স্বাতীর অসহ্য লাগে। কিন্তু উপায় নেই। তাকে মানতেই হয়, আনুষাঙ্গিকব্যবসারঝামেলার মতো। স্বাতী অবশ্য কৃতজ্ঞ এ দুজন মানুষের কাছে। এদেরঅদৃশ্য বরাভয় না থাকলে স্বাতীকেকবে রং মেখে ধর্মতলায় দাঁড়াতে হত।
গুহগিন্নির সতীপনায় সমরবাবু ব্যথিত হন। সঙ্গে আবার কর্তা সঙ্গত করছে। লোকটারএতটুকুবিবেকবোধ নেই। ঝড় যে আসছে তিনি বুঝতে পারছেন। তিনি দুরদর্শী।অহেতুক ফালতু ব্যাপারে যাননা। তার মধ্যে দার্শনিক ব্যাপার স্যাপার নেই।কিন্তু উপকারীর মুল্য বোঝেন। কী করে ঝড় সামলাবেনমনে মনে আঁক কষেন।সেক্রেটারি হিসাবে তার কর্তব্যবোধও আছে।বেশির ভাগ মেম্বারই ছাপোষা।দু-চারজনের মাসিক বিল কয়েক মাস বাকি। এঁরা সাধারনত মিটিং-এ আসেন না। এঁদেরনিয়ে ঝামেলানেই। চিন্তা বিবেকবাবুকে নিয়ে। টাকার গরম আছে। মাছ কখনও ওজনেকেনেন না, কেনেন আকারে।তিনি এ ব্যাপারটা বাজারে লক্ষ করেছেন। তাঁরব্যবসায়ী সত্তা বলে, এ রকম লোক পাল্টি খেতে দু সেকেন্ডসময় নেবে না। তিনিস্বাতীর আগত ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত হন। বলেন ম্যাডাম আমরা বরং থানায়জানাই।বিবেকদা একটা এফ আই আর করুন। উনি তো এসব ব্যাপারে এক্সপার্ট।
এক্সপার্টকথাটার মধ্যে খোঁচা আছে। উচ্চারনের চড়াই উতরাই আছে। বিবেক গুহ দপ করেজ্বলে ওঠেন।শালা হারামজাদা। শান্তির সংসারে দেশলাই মারছে। চারতলারস্বপন রাজাবাজারে পদার্থবিজ্ঞানে গবেষনা করে। বিষয় মহাজাগতিক রশ্মি।স্বাতীরগুনগ্রাহীদের একজন। বাবার বয়স হয়েছে। সেই এসব মিটিং-এ আসে।বুড়োগুলোর ন্যাকামি দেখে তারপরিশীলিত চিত্ত বিচলিত হয়। তারসাম্যবাদী মনকিছুতেই মানতে চায় না এই বুর্জোয়াগুলোরচিড়বিড়ানি। সে আর চুপ করে থাকতেপারে না, বলে, আমরা বোধহয় একটু বাড়াবাড়ি করছি। একজনস্বাধীনচেতা মহিলারব্যাক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছি।
গুহগিন্নিবিড়বিড় করেন হস্তক্ষেপ না পদক্ষেপ। তিনি রাগে ফোঁস ফোঁস করেন।হাউসিং-এস্বাতীর যে এতহিতাকাঙ্ক্ষী আছে জানতেন না। সরষের ভেতর ভূত থাকলে তিনি এতঅনাচার সামলাবেন কি করে।
তিনিগম্ভির গলায় বলেন, স্বাধীনতার সঙ্গে দায়িত্ববোধও থাকা উচিত। স্বপন ছাড়বারপাত্র নয়। সেমহাব্রহ্মান্ড নিয়ে নাড়াচাড়া করে। সামান্য আশা হাউসিং-এরবায়ুস্তর নিয়ে তার কোনও চিন্তা নেই।
সে নিরীহ গলায় বলে, তবে তো আমাদেরঅনেকের স্বাধীনতা নিয়েই চিন্তা করতে হয়।
ক্রোধ মানুষের বুদ্ধি হরন করে। গুহগিন্নিও আন্দাজ করতে পারেন না। তির কোন দিকে যাচ্ছে।
সমরবাবু দুঁদে ব্যবসায়ী। কিছুটা আন্দাজকরেন। মনে মনে স্বপনকে বাহবা দেন।
গুহগিন্নি বোকার মতো বলে বসেন, কার স্বাধীনতার কথা বলছ? স্বপন আর এক সেকেন্ডসময় নষ্ট করেনা, বলে, কেন আমার প্রতিবেশী ডাক্তারবাবু।
গুহগিন্নীর গালের লালিমা কয়েক ডিগ্রিবেড়ে যায়। ডাক্তারবাবুরসাথেপলির একটা সূক্ষ আশনাই আছে।বৃত্তান্তটি আরও সূক্ষতর বায়ুস্তরে যাতায়াতকরে। তা আবার প্রথম ধরা পড়ে স্বপনের রেডারে। কর্মক্লান্তডাক্তারবাবু মাঝেমাঝে মদ্যপান করে রাতে বাড়ি ফেরেন। বেশ রাতে। সিকিউরিটি তখন গভীরতন্দ্রামগ্ন। এ নিয়ে বিবেকবাবুর কাছে নালিশো হয়েছে, তিনি মিটিয়ে দিয়েছেন।মাঝে মাঝে রাতে তালা খুলেদেবার মহৎ দায়িত্বটি গুহগিন্নিই নিয়েছেন।
স্বপনঅনেক রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করে। সে জানে রাতের ঘন্টাধ্বনি মানেইডাক্তারবাবু। একদিন ঘন্টারআওয়াজ শুনে একটু কড়কে দেওয়ার ইচ্ছা হলডাক্তারবাবুকে। শিতের রাতে আলোয়ানে বুক মুখ ঢেকে সেসিঁড়ির এক কোনে। গুহগিন্নি তখন সমাজ সেবায় ব্যাস্ত। তালা খুলে দিয়েছেন। ডাক্তারবাবু এক পা একপাকরে এগুচ্ছেন। গুহ গিন্নি নৃত্য শিক্ষিকার মতো ডাক্তারবাবুর তাল ঠিককরছেন। সে এক স্বর্গীয় দৃশ্য।স্বপনও কিঞ্চিত বেসামাল হয়ে পড়ে। গুহগিন্নিরসঙ্গে চোখাচোখি হয়ে যায়। তারপর থেকেই গুহগিন্নি, ডাক্তারবাবু, দুজনেইস্বপনকে একটু বাড়তি খাতির করেন। জাগতিক ব্যাপারস্যাপার ছেড়ে, মহাজাগতিকবিষয়বস্তুর খোঁজ-খবর করেন। স্বাতীরব্যাপারটা স্বপন পুরোপুরি জানে। তার প্রচ্ছন্ন সহানুভুতিও আছে। বিবেকদাইতার অতীত জীবননিয়ে সমস্ত ঘটনা বলেছেন। আর্থিক অনটন, বেঁচে থাকার চেষ্টা,তারপর শেষ চেষ্টা, এই মধুচক্র।
বিবেকবাবু গিন্নির এই গোপনপ্রেমঅভিসার জানেন না যে তা নয়। গভীর রাতে ঘন্টার মুর্ছনায় তিনিশ্রীকৃষ্ণর কপটনিদ্রার অভিনয় করেন। কারণ স্ত্রীর কাছে স্বাতী উপাখ্যান প্রকাশ হওয়ার পরথেকে এলুকোচুরি প্রয়োজন আছে। উভয়েই দক্ষ অভিনেতা অভিনেত্রীর মতো পরস্পরেরকাছে নৈতিক সমর্থনআদায় করেছেন। কিন্তু সবার সামনে স্বপনের এই অগ্নি আহুতিভালো লাগে না। তিনি অপমানিত বোধকরেন। কে কত বড় সতী তাঁর জানা আছে। তাওযদি না তিনি স্বাতীকে স্বপনেরসাথেদেখতেন।পার্কস্ট্রিটের পানশালায়। কিন্তু ব্যাপারটা জটিল হবার আশঙ্কায় তিনি প্রকাশ করতেপারেননি। এমনকিগিন্নির কাছেও।কারন তারসাথেসেদিন অফিসের ঠিকা কম্পিউটার অপারেটার অরুন্ধুতি ছিল। মহিলাররোজকারঘন্টার হিসাব তাঁকেই দস্তখত করতে হয়। ব্যাপারটা চেপে যাওয়া ছাড়া গতি ছিলনা। মিটিংযখন ভেস্তে যাওয়ার মুখে, স্বপন বলল, দেখুন, খুনিকেও হাকিমসাহেবআত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেন।আমাদের উচিৎ, মিসেস মিত্রকে মিটিং-এ ডাকা।তাঁর বক্তব্য জানা। বিবেকবাবু, সমরবাবু হাঁ হাঁ করেওঠেন। গিন্নিরাওব্যাপারটার মধ্যে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পান।
স্বপনহেসে বলে, তা হলে ব্যাপারটা আমরা কিছুদিন অনুসন্ধান করি, মানে পর্যবেক্ষণকরি। আমিকাকিমাকে বলব, উনি খোলা চোখে ব্যাপারটা নিয়ে ভাবুন। কাকিমা মানেগুহগিন্নি।
কাকিমাশব্দটি গুহগিন্নি ঘৃনা করেন। তিনি লক্ষ করেছেন স্বপন এই শব্দটি ইদানিংব্যবহার করছে। তাঁরগোপন অভিসার ধরা পড়ার পর থেকে। আগে স্বপন পলিদি বলত।মাঝে মাঝে বৌদি।
পলিপ্রাচুর্যে ক্লান্ত। বড় একা। একমাত্র ছেলে দেওঘরে পড়ে। স্বামী না বলতেইশাড়ী, গয়না, প্রসাধনীতে ঘরভরিয়ে দিয়েছে। এমনকী একটা মারুতিও। শরীরচর্চা,ভিটামিন যুক্ত খাবার, যথেষ্ঠ অবসর। পুরুষেরদৃষ্টিতে এখনও তিরিশ। স্বাতীতার স্বামীকে বশ করেছে। তিনি পরাজয় মেনে নিতে পারেন না। ডাক্তারবাবুওস্বপন দুজনেরই তাঁর উপর আকর্ষন আছে। দুজনকেই তিনি প্রশ্রয় দিয়েছেন।স্বামীর উদাসীনতা, স্বাতীরস্বেচ্ছাচারিতা তাঁকে উৎসাহ দিয়েছে। স্বপনেরউপর তাঁর আকর্ষন অনেকটা বন্য, আর ডাক্তার তাঁকেমানষিক প্রশস্তি জোগায়।বিপত্নিক প্রেমিকের কাছে তিনি অনেকটা শোকেসে রাখা হিরের নেকলেস। অনেকযত্নঅনেক মূল্য। দুই বিপরিতমুখী স্রোতে তিনি ঘুর্ণিঝড়ে ঘোরেন। তাঁরমনে হয়, আজকের আলোচনা সভা স্বাতীর জন্য নয়, কয়েকজন হৃদয়হীন পুরুষেরদ্বিচারিতার কথা।ঘর, সংসার, স্ত্রী-পুত্র সহ কিছু শিক্ষিত মধ্যবিত্তপুরুষ। শয়ন, ভোজন, রমন, গৃহনির্মাণ সব অনিয়মেরব্যকরণ। তাঁর ঘৃনার তেজ়কমে আসে। একজন অসহায় নারীর প্রতি আর এক রিক্ত হৃদয়ের আর্তি।
দুপুরেপলির সময় কাটে না। স্বাতী তাকে অদৃশ্য চুম্বকে টানে। মনে পড়ে স্বাতীরডিভোর্সের দিনগুলোরকথা, কত সান্তনা দিয়েছেন। স্বাতী তার হাতে হাত রেখে কতকেঁদেছে। স্বামীকে লুকিয়ে সামান্য অর্থসাহায্য। সামান্য তরিতরকারি।স্বাতী এসব মনে রাখে। সিঁড়িতে দেখা হলে চোখ নামিয়ে নেয়। যেনপালিয়ে যেতেপারলে বাঁচে। পলি বুঝতে পারে, স্বাতী লজ্জিত। অপরাধী চোখ। পুরুষের কামনারকাছে নারীকত অসহায় সে জানে।
পলিসব দ্বিধাদ্বন্দ্ব ঝেড়ে ফেলে হাজির হয় স্বাতীর ফ্ল্যাটে। কলিং বেল টেপে।কাজের মেয়েটি দরজা খোলে।বোধহয় নতুন। পলিকে চেনে বলে মনে হয় না। দরজা খুলেবলে দিদি বাড়ি নেই। পলি বলে আমি সামনেরফ্ল্যাটে থাকি। দিদিকে ডাকো।
মেয়েটি কি ভেবে বলে, দিদি এখন কাজে।বন্ধু আছে।
আমিএখন বসছি। দিদির সঙ্গে কথা বলব। মেয়েটি কায়দাকানুন সব জানে, কিছুতেই ঢুকতেদেয় না।ঘরের ভেতর থেকে নারী কন্ঠে আওয়াজ আসে - কে রে?
আপনার নাম কী?
বলো পলিদি।
কিছুক্ষনপর পাশের ঘর থেকে স্বাতী বলে, বসতে দে। পলি ঘরে ঢোকে। সুন্দর সুচারু ভাবেসাজানো। দামিসোফা সেট। সেন্টার টেবিল। পাশে এরিকা পামের টব। এক কোনে মাকালীর ছবি। জবা ফুলের মালাদেওয়া। এখনও ঘরে দামি ধুপের গন্ধ। স্বাতীরবর্তমান স্বাচ্ছন্দ্য সে অনুভব করে।
তারঅদ্ভুত অনুভুতি আসে। সোফার চামড়ায় হাত বুলোয়। মসৃণ। এখানেই কি তার স্বামীমিলিত হয়?সেএক কোনে সরে বসে। তার নিদ্রা আসে। স্বপ্ন অনুরণিত তরঙ্গেতাকে ভাসায়, কল্পনার সাগরে। পাশের ঘরেস্বাতীর কাজের চিত্র-কল্প ভেসে আসে।অনেক্ষন বসে থাকে। ঘরের দরজা খোলার আওয়াজে সংবিৎ ফিরেআসে।
একজনসৌম্যদর্শন উত্তর-চল্লিশ পুরুষ সামনের চেয়ারে বসে জুতোর ফিতে বাঁধেন দ্রুতবেগে। কোনওদিকে তাকান না। দরজা খুলে বেরিয়ে যান। মনে হয় কোথায় যেন দেখা।একটু যেন চেনা।
স্বাতীরদিকে এই প্রথম তাকায়। বহুদিন পরে চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আকর্ষণীয়া। মুখ,দেহ।লাস্যময়ী ছোঁয়া, পরনে হাউসকোট। একমাথা চুল কোমর পর্যন্ত। যে কোনওপুরুষের বিভ্রান্তির জন্য যথেষ্ট।স্বাতীতাকে জড়িয়ে ধরে। কান্নায় ভেঙে পড়ে। পলি নিরবে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।স্বাতী ধরা গলায়বলে, পলিদি আমাকে ক্ষমা করো, আমার কোনও দোষ নেই। পলিনিরবে হাসে, বলে, আমি জানি, বিবেককেআমি খুব ভালো করে জানি, তোর ওপর আমারকোনও রাগ নেই।
পলি দুপুর হলে ছটফট করে। কী এক অচেনাআকর্ষণ তাকে এক পা এক পা করে নিয়ে যায় স্বাতীর ফ্ল্যাটে।সে স্বামীকেও বলেনিস্বাতীরসাথেবন্ধুত্বের পুনর্নবীকরণের কথা।
স্বাতীগল্প করছে। হাউসিং-এর পুরুষদের কথা। ছেলে বুড়ো সব। তার গুণগ্রাহী। স্বাতীপ্রথমে চেষ্টা করেছেএদের স্পর্শ বাঁচিয়ে চলতে। সে বাড়ির দুর্নাম চায়নিকোনওদিন।
শৈবাল তাকে ভালবাসে অন্ধের মতো। সেওভালবাসে। কিন্তু চায়না তার সংসার ভেঙে যাক। শৈবালেরভালবাসার টানা-পোড়েনে সেবিক্ষত।
এখানেপলির বেশ কয়েকজন নতুন বান্ধবী হয়েছে। কলেজ ছাত্রী, গৃহবধূ, শিক্ষিকা।চাঁচা ভুরু, দৃশ্যমানশরীর রোমশূন্য। পলি ভাবে এরা কি সবাই লেডিচ্যাটার্লি। স্বাতী ভুল ভেঙে দিয়েছে, না। কারও বাড়িতৈরির কিস্তি বাকি।ব্যাংক গুন্ডা পাঠিয়েছে। কারও সন্তান ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে, স্বামীর সীমিতআয়ে চলেনা। কারও স্বামী মদ্যপ, সব টাকা নেশায় ঢুকে যায়। ছাত্রীদের সমস্যাঅন্য, পার্লারের খরচ, নতুন চুড়িদার, নাচঘরে প্রথম অভিযান। দু-একজন লেডিচ্যাটার্লি আছেন। যেমন মিসেস সরকার, উত্তর-চল্লিশ বলিষ্ঠামহিলা। উনি খুশথাকলে আর কলেজের ছাত্র পেলে বিনা পারিশ্রমিকেও কার্য করেন।
শীততাপনিয়ন্ত্রিতঘরে পলি মাঝে মাঝে উত্তাল হয়ে ওঠে। অচেনা অজানাজগতের অনাহূত অতিথি হিসেবেশরীর কাঁপে। সারা দেহ ঘামে। এ কি শুধুই নিঃসঙ্গতা, স্বামীর উদাসীনতা। সেনিজেও উত্তর খুঁজে পায় না।একদিন মিসেস সরকার বলেন, পলি তুমি এখানে শুধুশুধু আসো কেন? সময় কাটে না? পলি উত্তর দেয় না।অবিরাম হাত কচলে যায়।
কী আগুন পোয়াতে আসো?
পলি অস্ফুট স্বরে কিছু বলে। দুঃখ,কম্পন, বেদনা মেশানো কিছু শব্দ।
তুমি এত সুন্দরী, হাউসিং-এ তোমার এতগুণগ্রাহী, তোমার কিসের দুঃখ?
পলি রেগে যায়। বলে, না স্বাতী আমারবন্ধু। দুপুরে বড় একা লাগে, তাই আসি।
আমাদেরও বন্ধু, অবশ্য কাজের।
পলির লালিমা গাঢ় থেকে গাঢ়তম হয়।যেনহাতেনাতে ধরা পড়ে যায়।
স্বাতী বাঁচিয়ে দেয়। মিসেস সরকারকেবলে, এরকম বোলো না, পলিদি খুব ভালো মানুষ। সে সময় আমাকেসাহায্য না করলেকোথায় ভেসেযেতে হত।
মিসেসসরকার বলেন, চলো পলি আমরা দুজন ভাসি। নৃত্যের তালে তালে। পলি ছুটে ঘর থেকেপালায়।নিজের ফ্ল্যাটে গিয়ে হাত মুখ ঠাণ্ডা জলে ধোয়, চোখ বুজে বিছানায়শুয়ে পড়ে। গহনে যে কী বার্তা আছে, তাকে নিয়ে যায় কয়েকজন মোহিনীর কাছে।বারবার।
সেপ্রতিজ্ঞা করে আর কোনও দিন যাবে না স্বাতীর কাছে। দু-তিন দিন সত্যিই যায়না। কিন্তু চার দিনেরদিন ড্রাগের নেশার মতো হাজির হয় ওর দরজার সামনে। যেননিশিতে পেয়েছে। স্বাতী দরজা খুলে দেয়।হাত ধরে বসায় সোফায়। উদ্বিগ্ন গলায়বলে, পলিদি শরীর খারাপ? মুখ এত শুকনো কেন? পলি জবাব দেয়না। দু হাতে মুখঢেকে অঝোরে কাঁদে। স্বাতী কিছু বলতে চায়। ইতস্তত করে।
পলিদি একটা কথা বলব? যদি কিছু না মনেকরো।
কী কথা?
আমিবলব কি না বুঝতে পারছি না। তুমিকীভাবে নেবে।
তুমি বলো, তুমি বলো। আমি কিছু মনে করবনা।
এক ভদ্রলোক তোমার কথা বলছিলেন। আলাপকরতে চান।
পলি অবাক চোখে বলে কে ভদ্রলোক?
সেইপ্রথম তুমি যেদিন এসেছিলে। ভদ্রলোক জুতোর ফিতে বাঁধছিলেন, উনি রোডস-এর বড়ইঞ্জিনিয়ার।আমাদের সেক্রেটারির বন্ধু, ভালো পেমেন্ট দেন।
পলিস্তব্ধ হয়ে যায়। তার যথেষ্ট প্রাচুর্য আছে। কীসের অভাব। দুজন গুণগ্রাহীওআছে। তবু বুকের খাঁচায়কেন এত তোলপাড়। হৃৎপিণ্ড আহত চিতার মত এক কোণেকামড়ায়। সে ঘৃণা করে পুরুষদের। তাদেরবিশ্বাস ভঙ্গে সে মর্মাহত। স্বামী,ডাক্তার, স্বপন, তামাম দুনিয়ার পুরুষ পলির মোহিনী রূপে মুগ্ধ।নীলকণ্ঠ।শুধুই কি শরীর, কোথায় ভালবাসা। কোথায় গেল সে শৈশবের পাখিরা, দোয়েল, শালিক,টিয়া।দুপুরে অহর্নিশি ফেরিওয়ালা হাঁক। ভালবাসা কি এদের সঙ্গেই পালিয়েগেল। আমাদের কি কোনও হৃদয়থাকতে নেই। ভালবাসা থাকতে নেই। নিরালা দুপুরেবালিশ কি ভেজে না? তবু ওরা পণ্য ভাবে। মরাভেটকি বা শীতে নতুন আলু, মূল্যযা-ই হোক না কেন।
সেইশুরু। প্রথমে স্বাতীর কাছে কলাবিদ্যায় শিক্ষানবিশি। তারপর হপ্তায়দু-চারদিন স্বাধীন পক্ষিণী।দুপুরে। খুব সাবধানে। প্রতিহিংসা, ঘৃণা,কামনা। সে নিজেও ঠিক উত্তর পায় না। হয়তো সব কিছুরনির্যাস। দুনিয়ার সবপুরুষই এক। শিক্ষিত, অশিক্ষিত, ধনী, দরিদ্র, সব এক। সারমেয়। চারপেয়েভাদুরে জন্তু। এখন আর বিবেক দংশন করে না। বরং পুরুষের সেবা তার ভালোইলাগে। ওদের মিথ্যার ফুলঝুরিশুনে হাসি পায়। চাটুকারিতায় মনে হয় মক্ষীরানি।
সেক্রেটারিস্বাতীকে সাবধান করে দেন। বিপদ আসতে পারে। উনি পলির ব্যাপারটাও জানেন। চিফইঞ্জিনিয়ার বলেছে। কোথাকার জল কোথায় গড়িয়েছে। কোনও কেলেঙ্কারি যেন না হয়।উনি সামলাতেপারবেন না। হাউসিং-এর অধিকাংশ মানুষই এককাট্টা অনাচার বন্ধকরো। ধরা পড়লে কিছু করার নেই।এতগুলো টি ভি চ্যানেল।
চার
দিনদিন ব্যাবসার শ্রীবৃদ্ধি হচ্ছে। আজ গোয়া কাল মুম্বাই। প্রায়ই বলে, ছেড়েদেব। তারপর শুধু তুমি আরআমি। আমিও বসে আছি সেই কুয়াশাচ্ছন্ন তুমি আমিযুগের আশায়।
গুহগিন্নীরগোপন অভিসার আখ্যান আমার অজানা নয়। মনে হয় বিবেকদাও জানেন। কিন্তু কিছুকরারনেই। দাঁতে দাঁত চেপে অপেক্ষা করতে হয়। এতে আমার হালকা মানসিক তৃপ্তিআছে। কিছুটাপ্রতিহিংসাজনিত। রহস্যময় রূপকে বুঝিয়ে দিই, কেমন দিলাম।
সেদিন স্বাতী আসতে বলল। টিভি খারাপ।দেখতে হবে। এভুবনে আমার মতো খিদমতগার আর কেআছে। এ যেন মনিবিনির আদেশ। আমিও একপায়েরাজি।
বেলটিপতে মিসেস সরকার দরজা খুলে দেন। সাত সকালেই মুখে ঘন প্রসাধনীর প্রলেপ।লিকারের মৃদু গন্ধ।স্বাতী বলেছে টিভিটা দেখতে। আমি বললাম, স্বাতী কোথায়?প্রশ্ন করে নিজেই অপ্রস্তুত হয়ে যাই।যেনএকটু অপমানিত হই। জানা ব্যাপার।তবু নিজেকে পুরুষ বলতে লজ্জা লাগে। এ যেন পুতুল খেলা। মহারাণীআর প্রজা।
কী হল। আমাকে ভাল লাগে না বুঝি। মুখেএকগাল মিচকে হাসি।
মিসেস সরকারের জীবনপঞ্জি আমার জানা।ছলাকলায় বাৎস্যায়ান গুলে খেয়েছেন। তবে মনটা ভাল।কাউকে ভাল লাগলে আর্থিক সাহায্যওকরেন।
না,আর না। এই শেষ। ছাপোষা কেরানি। বেঁচে থাক আমার অফিস, ক্লাব, নাটক,লাইব্রেরি, টুকটাকমেরামতের কাজ। খারাপ কী। আমার জায়গায় আর একটা মোরগকেবসিয়ে যাব। অফিসের প্রদীপ।ফেশিয়াল করে। ঘাড়ে পাউডার মাখে। মুখে দাড়ি গোঁফকম। থিয়েটারের নায়িকাকে মুফতে মোগলাইমাংস খাওয়ায়। অফিস ক্যান্টিনে।
পিকচারটিউব গেছে। হাজার পাঁচেকের ধাক্কা। অর্ধেক মাইনে। যদিও স্বাতীর ক্ষমতাআছে। তবু চটিরপেরেকের মতো খিচখিচ করে। গত মাসেই ও একটা ঘড়ি দিয়েছে। এমাসে আমার পালা। আমি তো স্বাতীনই। এখনও নৈতিকতা হারাইনি।
মিসেসসরকার সামনের সোফায় বসে। অবিরাম পায়ের দুলুনি দেখি। পায়ের গোছ থেকে শাড়িদু ইঞ্চিওপরে। এক জোড়া রূপোর নূপুর। ঝুমঝুম করে আমন্ত্রণের সুরে বাজছে।হ্যামলিনের বাঁশির সুরে বাজিয়েযাচ্ছেন সুডৌল পদযুগল। বেশ টের পাচ্ছিউত্তেজনার পারদ। উনি তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছেনছাগশিশুর ছটফটানি। কামনারকাছে পুরুষের চিরন্তন পরাজয়। বিস্রস্ত বসনা নারীর মাদক আবেদনেআমিনিস্তব্ধ বিস্ফোরক। টুকরো পাথর ঘর্ষণের অপেক্ষায়।
হঠাৎদরজায় দমাদ্দম ধাক্কা। মিসেস সরকার উঠে দাঁড়ান। রঙ্গিণী রূপ এক লহমায়পাল্টে যায়। যেননেহাতই এক সাধারণ নারী। ভয়ার্ত চেহারা। অসহায় চাহনি।স্বাতী ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। এলোমেলোপোষাক। চিফ ইঞ্জিনিয়ার পোষাক সামলাতেব্যস্ত। দুজন নারী ঠিক যেমন দৈনন্দিন অফিস, আদালত, দোকান বাজারে দেখি।হিংস্র শ্বাপদের সামনে দুটি অসহায় হরিণী। সশব্দে দরজা ভেঙে পড়ে। চার-পাঁচজনপুলিশ। পেছনে ক্যামেরা হাতে টিভি ক্রু। বিবেকদা, ডাক্তারবাবু, স্বপন আরও অনেক।
মহিলা সাংবাদিক ধারাভাষ্য দিয়ে চলেছেন।ঝড়ের গতিতে। দরজা, জানলা, মদের গেলাস, আকাশের রং।
কসবায়আবার মধুচক্রের আসর। দু-জন মহিলা সহ দুজন পুরুষ ধরা পড়লেন। পুলিশের কাছেকিছুদিনধরে অভিযোগ আসছিল। সেই অনুযায়ী নজর রাখা হয়েছিল। আজ হাতে নাতে ধরাহল। ফ্ল্যাটের মালিকস্বাতী মিত্র। মহিলা ডিভর্সী ও প্রসাধনী ব্যবসারআড়ালে মধুচক্র চালাতেন। আসুন দেখা যাক এখানকারবাসিন্দারা কী বলেন।
আপনার নাম?
আমি পলি গুহ, উল্টো দিকে থাকি।
আপনি কি জানতেন, এখানে দেহ ব্যবসাচলছে?
হ্যাঁ আন্দাজ করতাম। এই মেয়েটা পরিবেশবিষিয়ে তুলেছিল।
আপনারা প্রতিবাদ করেননি?
আমার স্বামী বহুবার প্রতিবাদ করেছেন।
আপনি কী করেন? সাংবাদিক মাইকডাক্তারবাবুর সামনে ধরেন।
আমি ডাক্তার।
আপনি খবর রাখতেন?
রাখতামমানে খবর ছিল, কিন্তু মহিলা যে তলে তলে মধুচক্র চালাচ্ছেন স্বপ্নেওভাবিনি। আমি জানতামমহিলা প্রসাধনীর ব্যবসা করেন। এখানকার মহিলাদের সেলসগার্ল ভাবতাম।
স্বপনেরমনে হল, কিছু বলা উচিত। সে ভিড় ঠেলে এগিয়ে আসে। বলে, মহিলা ভেষজ ক্রিমেরব্যবসাকরেন। মাঝে মাঝে পার্টি দেন। ব্যবসার স্বার্থে। আমিও দু-চারবারপার্টিতে এসেছি। মদ্যপানও করেছে। এবাড়ির দু-চারজনেও যোগ দিয়েছে।
গুহসাহেবের রক্তচাপ তখন হিমাঙ্কের দিকে। তিনি স্বপনকে ভয় করেন। পাছে বেফাঁসকিছু বলে দেয়।তিনি স্বপনকে ঠেলে মাইকের সামনে আসেন। বলেন, দেখুন আমরাসবাই ছাপোষা মানুষ। যে যার কাজকরি। সময় কোথা দিয়ে চলে যায় খোঁজ রাখি না।যা বলার আমাদের সেক্রেটারি সমরবাবু বলবেন। উনিমাইকটা ঠেলে সমরবাবুর দিকেধরিয়ে দেন।
দেখুন, এ বাড়িতে একগাদা স্কুল কলেজেরছেলেমেয়ে। তারাই বা কী শিখবে। আমরাই বা নৈতিকতার কীশিক্ষা দেব।
আমি শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। রোজগারচেনা মুখগুলো মনে হয়, সারি সারি নরমুণ্ড, ঘৃণার ছেঁড়া পাতা।
সাংবাদিক মাইকটা হঠাৎ আমার সামনে ধরেন।
আপনি কী করেন?
আমি টিভি মেকানিক। আমতা আমতা করি।
মানে,আপনি টিভি সারাতে এসেছিলেন? বলে স্বাতীর দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে চায়।স্বাতী নীরবে ঘাড়নাড়ে। ভিড়ের মধ্যেথেকে বিবেকদা বলে ওঠেন।
হ্যাঁ হ্যাঁ আমি চিনি। আমার বাড়িরটিভির কাজও উনি করেন।
স্বপনবলে, আমার বাড়ির কাজও করেন। অফিসার আমার দিকে আড় চোখে তাকান। বুক ভরে দমনিই।মুক্তি এত সুন্দর জানতাম না। ভালোবাসা এত বেদনার জানতাম না। যন্ত্রণার শেষ সীমায় এসে সব যন্ত্রণাক্ষমতা হারায়। সেই সীমাহীন সাগরেরউত্তাল ঢেউ-এর মাঝে স্বাতী নামের ডিঙাটিকে আমি আঁকড়েধরলাম। স্বাতী হাতধরে তুলে নিল। ছোট্ট ভঙ্গিতে আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিয় গেল।
বিবেকদা মুচকি হাসিতে জানালেন কেমনদিলাম?
Digg Google Bookmarks reddit Mixx StumbleUpon Technorati Yahoo! Buzz DesignFloat Delicious BlinkList Furl

0 মন্তব্য(গুলি): on "মধুচক্র"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন